Monday 1 April 2013

TEST POST from the website of the DAILY INQILAB, Dhaka

This is a test post


এপ্রিল লংমার্চ প্রত্যাহারের অনুরোধ

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী সংবাদদাতা  : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পূর্ব ঘোষিত আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি থেকে নিবৃত্ত করতে সরকার এখন বেশ তৎপর। তবে সরকারের এই চেষ্টা অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম তাদের দাবি-দাওয়া তথা লংমার্চ নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। অরাজনৈতিক এই সংগঠনের আমীর আল্লামা  শাহ আহমদ শফী (মঃজিঃআঃ) আগের অনমনীয় অবস্থানে রয়েছেন। গতকাল (রোববার) হেফাজতে ইসলাম আমীরের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রামের মন্ত্রী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আল্লামা  শাহ্ আহমদ শফী আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি আপাতত প্রত্যাহারে মন্ত্রীর অনুরোধ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। লংমার্চ কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে কোন মহল দেশে বিশৃঙ্খলা করতে পারে- সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে আল্লামা  শাহ্ আহমদ শফী পুনরায় সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বরং ঈমান-আক্বিদা ও দেশরক্ষা করে বিশৃঙ্খলাকারী নাস্তিকদের শাস্তির দাবিতেই আমাদের আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন অরাজনৈতিক, অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। দেশে অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টির অপতৎপরতা চালাচ্ছে কতিপয় নাস্তিক বগাররা।   
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ থামানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) চেয়ারম্যান এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর পীরে কামেল শায়খুল ইসলাম আল্লামা  শাহ্ আহমদ শফীর সাথে সাক্ষাত করেছেন। মন্ত্রী সাক্ষাত শেষে তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হেফাজতে ইসলামের আমীর ও নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী নিষ্ফল বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি তথা দাবী-দাওয়াগুলো যুক্তিসঙ্গত বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হাটহাজারী মাদ্রাসায় এসে পৌঁছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর পীরে কামেল শায়খুল ইসলাম আল্লামা  শাহ্ আহমদ শফীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। উক্ত বৈঠকে মন্ত্রী তথা প্রতিনিধির পক্ষ থেকে আগামী ৬ এপ্রিল লংমার্চ প্রত্যাহার করতে বললেও হেফাজতে ইসলাম তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কারণে তাদের এই বৈঠক নিষ্ফল হয়েছে বলে জানা যায়। এ সময় মন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা লংমার্চ প্রত্যাহার করার অনুরোধ করলে নেতাকর্মীরা প্রত্যাখ্যান করে বরং লংমার্চে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করলে মন্ত্রী নীরব ভূমিকা পালন করেন। 
উক্ত বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব আল্লামা  জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা  শামসুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে মন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আলহাজ জাফর আহামদ, হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন নোমান ও হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আজম উদ্দিন। 
মন্ত্রী বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলাম-এর আমীরের কক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলসহ বেরিয়ে আসলে বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার এ বৈঠক। কোরআন সুন্নাহর অবমাননা ও নবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করা সরকার কখনও সহ্য করবে না। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান। তাই হেফাজতে ইসলামের দাবি নিয়ে আমরা তথা সরকার অনেকাংশে একমত। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল ও জামায়াত-শিবির বেশ তৎপর। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে প্রস্তুত।
তিনি আরো বলেন, প্রধান বিরোধী দল ও জামায়াত-শিবির নাশকতা করতে পারে এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। তাইতো আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হেফাজতে ইসলামের সাথে আলাপের জন্য এসেছি। আমরা হুজুরের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এসেছি যাতে তারা এই বিষয়টি তথা কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক থাকেন। আর হেফাজতে ইসলামের দাবির সাথে সরকারও একমত। তবে বাস্তবায়নের জন্য সময়ের প্রয়োজন। 
এদিকে সাংবাদিকরা পুনরায় বৈঠক সম্পর্কে জানতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) চেয়ারম্যান এবং হেফজাতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর পীরে কামেল শায়খুল ইসলাম আল্লামা  শাহ্ আহমদ শফীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। আগামী ৬ এপ্রিল লংমার্চে অংশ নিতে তৌহিদী জনতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি। 
উলে¬øখ্য, গত শনিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে একই বিষয়ে আলোচনা ব্যর্থ হয়। মন্ত্রীর সাথে হেফজাতে ইসলাম, বাংলাদেশের আমীর আল্লামা  শাহ্ আহমদ শফী’র বৈঠক চলাকালে মাদ্রসার শত শত উৎসুক শিক্ষার্থীসহ অনেকেই মাদ্রাসার বাইরে ভিড় জমান।
আজ লালদীঘি ময়দানে শানে রেসালত সম্মেলন ৬ এপ্রিলের ঢাকামুখী লংমার্চ সফলের দৃপ্ত শপথ 
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আজ (সোমবার) শানে রেসালত সম্মেলন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত এই সম্মেলনে বন্দরনগরী ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের পাশাপাশি তৌহিদী জনতা যোগ দেবেন। সম্মেলনে লাখো তৌহিদী জনতার ঢল নামবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাগণ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যাবতীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শানে রেসালত সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য সকল প্রকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) অবমাননাকারী নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননারোধে জাতীয় সংসদে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন পাস, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনসহ ১৩ দফা দাবিতে আগামী ৬ এপ্রিলের ঐতিহাসিক লংমার্চ কর্মসূচীর আগে আজকের এই শানে রেসালত সম্মেলনকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলছেন, লংমার্চ সফল করার লক্ষ্যে শানে রেসালত সম্মেলন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এই সম্মেলন থেকেই নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী লংমার্চসহ সকল আন্দোলন সফল করার দৃপ্ত শপথ নেয়া হবে। এখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাগণ লংমার্চ কর্মসূচী সম্পর্কে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিবেন। এ সম্মেলন সফল করার জন্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নবীপ্রেমিক মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ।
১৩ দফা দাবিতে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গত প্রায় ২ মাস ধরে ধারাবাহিক কর্মসূচী পালন করে আসছে। ঘোষিত কর্মসূচীর মধ্যে আগামী ৬ এপ্রিল সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী লংমার্চ সফল করতে দেশব্যাপী চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে তাদের এ কর্মসূচীতে মহাজোটের অন্যতম শরিক সাবেক প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব এইচ এম এরশাদ-এর জাতীয় পার্টি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। লংমার্চ কর্মসূচীতে পূর্ণ সমর্থন জানানোর পাশাপাশি তা সফল করতে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও পীর ছাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম। এছাড়া দেশের প্রায় সকল ইসলামী দল ও সংগঠন এ কর্মসূচীর প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর হাটহাজারী দারুল উলূম মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে সাক্ষাত করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার। তিনি তাদের সাফ জানিয়ে দেন ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে অরাজনৈতিক এ কর্মসূচী কোনভাবেই প্রত্যাহার করা হবে না। 
এ প্রসঙ্গে সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রকৌশলী বনজ কুমার মজুমদার বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ হবে এটা নিশ্চিত হয়ে তাদের সকল রকম সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে লালদিঘী ময়দান এবং এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে হেফাজতে ইসলাম তাদের কর্মসূচী শেষ করবে।
জানা যায়, হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে নানা অপপ্রচারের মুখে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। এসব গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া যায় হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং এর সাথে কোন রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীর আড়ালে মহল বিশেষ নাশকতা করতে পারে এমন আশঙ্কাও অমূলক বলে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গোয়েন্দা সংস্থার এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই চট্টগ্রামের প্রশাসন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সকল সহযোগিতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নাশকতার আংশকা প্রকাশ করলে আল্লামা আহমদ শফী বলেন, আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অহিংস। নাশকতার আশংকা যারা করছেন, তাদের দায়িত্ব এসব আশংকা রহিত করা এবং লংমার্চের নিরাপত্তা বিধান। সরকার আমাদের দাবির প্রতি মনোযোগ না দিয়ে অন্য পথে এগুচ্ছে। এতে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হবে না। শান্তিপূর্ণ ঈমানী আন্দোলনকে মোকাবেলায় যত বাঁকা পথ অবলম্বন করা হবে, ততই সরকারের ক্ষতি হবে। আমি সবাইকে সরল পথে ফিরে আসতে বলব।  

No comments:

Post a Comment

Note: only a member of this blog may post a comment.